Wednesday, October 9, 2024
HomeUncategorizedআকাশে সাতটি তারা |নবম শ্রেণী| প্রশ্ন-উত্তর সমাধান | Akashe Satti Tara| Class...

আকাশে সাতটি তারা |নবম শ্রেণী| প্রশ্ন-উত্তর সমাধান | Akashe Satti Tara| Class 9| Question- Answer Solved

আকাশে সাতটি তারা

জীবনানন্দ দাশ

আকাশে সাতটি তারা কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর

আকাশের সাতটি তারা কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

উঃ আকাশের সাতটি তারা কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের লেখা রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

২ বাংলার নীল সন্ধ্যা কেমন কবি তাকে কীরূপে কল্পনা করেছেন?

উ: বাংলার নীল সন্ধ্যা শান্ত অনুগত এবং কবি তাকে কেশবতী কন্যারূপে কল্পনা করেছেন।

কবি ঘাসে বসে থেকে আকাশে কী দেখেন?

উঃ কবি ঘাসে বসে থেকে আসন্ন সন্ধ্যার দৃশ্যপটে আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠতে দেখেন।

আকাশে সাতটি তারা বলতে কোন তারাদের কথা বলা হয়েছে?

উঃ আকাশে সাতটি তারা বলতে আকাশের সপ্তর্ষিমন্ডলের কথা বলা হয়েছে।

কবি কামরাঙালাল মেঘের গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উঃ কবি আকাশের লাল মেঘের  গঙ্গাসাগরে ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে মৃত মনিয়া পাখির সাগরের জলে ডুবে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আকাশে সাতটি তারা ওঠার সময় কবি কোথায় বসে  ?

উঃ কবি জীবনানন্দ দাশ আকাশে সাতটি তারা উঠলে ঘাসের উপর বসে সন্ধ্যার রূপ দেখেন।

আকাশে সাতটি তারা কবিতায় সন্ধ্যার আকাশে কে এসেছে বলে কবির মনে হয়েছে?

উঃ ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় বাংলার সন্ধ্যার আকাশে এক কেশবতী কন্যা এসেছে বলে কবি জীবনানন্দ দাশের মনে হয়েছে৷

কবিরচোখের পরে‘, ‘মুখেরপরে কী ভাসে?

উঃ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘চোখের পরে’, ‘মুখের পরে’ বাংলার নীল সন্ধ্যার চেহারায় আসা কেশবতী কন্যার চুল ভাসে।

কেশবতী কন্যার চুলের.চুমা কোথায় ঝরে?

উঃ কেশবতী কন্যার চুলের চুমা হিজলে-কাঠালে-জামে অবিরত ঝরে পড়ে। 

১০ কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে কী কী বিশেষণ ব্যবহার করেছেন?

উঃ কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে শান্ত, অনুগত ও নীল এই তিনটি বিশেষণ ব্যবহার করেছেন।

১২ পৃথিবীর কোন পথ কাকে দেখেনি বলে কবির মনে হয়?

উঃ  পৃথিবীর কোন পথ বাংলার সন্ধ্যারুপী কেশবতী কন্যাকে দেখেনি বলে কবির মনে হয়।

১৩অজস্র চুলের চুমাবলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?

উঃ প্রকৃতির বুকে অন্ধকারের নিবিড়তাকে বোঝাতে তিনি ‘অজস্র চুলের চুমা’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।

১৪ রূপসী চুলের বিন্যাস থেকে কী ঝৱে?

উঃ রূপসী কেশবতী কন্যার অপূর্ব চুলের বিন্যাস থেকে ঝরে এত স্নিগ্ধ গন্ধ।

১৫আমি পাই টেৱ’-কবি কী টের পান?

উঃ প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশ টের পান সন্ধ্যায় যখন আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠে। .

১৬ এরই মাঝে বাংলার প্রাণ ;-বাংলার প্রাণ কীসের মধ্যে আছে?

উঃ বাংলার প্রাণ আছে নরম ধান, কলমি, হাঁসের পালক, পুকুরের জল, মাছ, কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত, শীতের কামড়, পায়ে-দলা মুথাঘাস ও বটের ফলের গন্ধে।

১৭ কবি কী টের পান?

উঃ কবি জীবনানন্দ দাশ টের পান সমাগত সন্ধ্যায় তাঁর পল্লি প্রকৃতিতে লুকিয়ে থাকা বাংলার প্রাণশক্তি।

১৮ কলমি কী ?

উঃ পুকুরের ধারে বা কোন জলাশয়ের ধারে জন্মায় এমন এক ধরনের শাক যা বাঙালির খাদ্যতালিকায় স্থান পায় ।

১৯আকাশে সাতটি তারাকবিতায় কবি কোন মাছ দুটিৱ উল্লেখ করেছেন?

উঃ কবি জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিত চাঁদা ও সরপুঁটি এই দুটি মাছের কথা উল্লেখ করেছেন।

২০ সন্ধ্যার সঙ্গে কবি কিসের ঘ্রাণ পান?

উঃ সন্ধ্যার আগমণের সঙ্গে কবি নরম ধান, কলমি, শর, পুকুরের জল, চাঁদা ও সরপুঁটি মাছের আঁশটে গন্ধ,পায়ে দলিত মুথা ঘাস ইত্যাদির ঘ্রাণ অনুভব করেন।

২১ কিশোরীর হাত ভিজে কেনো?

উঃ কিশোরী সন্ধ্যাবেলায় চাল দিচ্ছিল, তাই তার হাট ভিজে।

২২ কবি কখন বাংলার প্রাণকে খুঁজে পান?

উঃ আকাশে যখন সাতটি তারা ফুটে ওঠে তখন কবি বাংলার প্রাণকে খুঁজে পান।

২৩ আকাশে সাতটি তাৱা কবিতায় বটফল ব্যথিত কেন?

উঃ লাল লাল বটফল গাছের তলায় পড়ে থাকে, নিতান্ত অবহেলায়—এই ফল কেউ আদর করে তুলে নেয় না। তাই সে ব্যথিত।

২৪আকাশে সাতটি তারাকবিতায় কাদেৱ মৃদু ঘ্রাণের কথা বলা হয়েছে ?

উঃ পুকুরের জল থেকে ভেসে আসছে চাঁদা ও সরপুঁটি মাছের মৃদু ঘ্রাণ।

নম্বরের প্রশ্নঃ

কামরাঙ্গা লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে’-  পঙক্তিটির মধ্যে দিয়ে কবি কি বোঝাতে চেয়েছেন?

উঃ কবি জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় সন্ধ্যার আগমনের আগে বাংলার আকাশে সূর্যাস্তের আলোয় রাঙা মেঘের ছবি এঁকেছো। সূর্যের লাল আভায় মেঘগুলি যেন পাকা কামরাঙার মতো লাল হয়ে উঠেছে। মেঘের এই লাল রং খুবই ক্ষণস্থায়ী। লাল রং মুছে গেলে মেঘকে মনে হয় মৃত মুনিয়ার মতো ম্লান, বিবর্ণ। গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে তা অবলুপ্ত হয়। কামরাঙার রঙের সঙ্গে, মৃত মুনিয়ার সঙ্গে মেঘের তুলনা করা হয়েছে।

আসিয়াছে শান্ত অনুগত বাংলার নীল সন্ধ্যা——বাংলাৱ সন্ধ্যাকে শান্ত, অনুগত নীল বিশেষণে ভূষিত কৱাৱ কারণ কী

উঃআলোচ্য উদ্ধৃতিটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে গৃহীত। বাংলার গ্রামে শহরের মতো কোলাহল নেই, দিনশেষে সেখানে সমস্ত কাজের বিশ্রাম ঘটে।তাই সন্ধ্যা শান্তভাবে দিনের বিরতির ঘোষনা নিয়ে আসে। পল্লী বাংলার সন্ধ্যায় সারি সারি গ্যাস লাইট জ্বলে ওঠে না,তাই এক চাকচিক্যহীন সন্ধ্যা প্রতিদিন নিয়ম করে নেমে আসে।তাই সন্ধ্যা অনুগত।সন্ধ্যার অন্ধকার ও দিনের আলো মিশে যে আবছায়া তৈরী করে তার সঙ্গে গাছপালার সবুজ আভা মিশে সন্ধ্যাকে নীল করে।

কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;”—পঙক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

উঃ উধৃত পঙক্তিটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।এই কবিতায় জীবনানন্দ তার একান্ত নিজস্ব ভঙিতে পল্লিবাংলার সন্ধ্যাকে বর্ণনা করেছেন। গ্রাম বাংলার সন্ধ্যাকে তিনি এক মানবী রূপে কল্পনা করেছেন। সূর্য ডুবে গেলে যখন দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে, কবির মনে হয় যেন এক কেশবতী কন্যা এসেছে সন্ধ্যার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া কালো চুলে ঘনিয়ে আসে রাতের অন্ধকার। কবির চোখে এভাবেই কাব্যিকরূপে ধরা দেয় পল্লিবাংলার সন্ধ্যা।

আমার চোখের পরে, আমার মুখের পরে চুল তার ভাসে’ – বক্তব্যটি ব্যাখ্যা কর।

উঃ সবে যখন সুর্য অস্ত গেছে,আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠেছে সেই সময় কবি ঘাসের উপর বসে স্পর্শ, গন্ধ ও বর্ণ দিয়ে পল্লীবাংলার সন্ধ্যাকে অনুভব করে। তার মনে হয় যেন এক এলোকেশী মেয়ে দেখা দিয়েছে সন্ধ্যার আকাশে। তার ছড়িয়ে পরা কালো চুলের মতো ধীরে ধীরে অন্ধকার নামে।কবি তার চোখে মুখে সেই অন্ধকারের স্পর্শ অনুভব করেন।

পৃথিবীর কোনো পথ কন্যারে দেখেনি কোকবির বক্তব্য বিশ্লেষণ কর।

উঃ কবি বঙ্গভুমিকে পৃথিবীর সব থেকে রুপসী নারী রূপে গণ্য করেন। রূপসী বাংলার মতো সুর্য  পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তাই সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সেখানে যে সন্ধ্যা নামে সে যেন কোনো এক কেশবতী কন্যার খোলার চুলের রাশি। তার চুল যেভাবে আকাশে ছড়িয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে তোলে তা আর পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। কবির কল্পনার সেই মানসী আসলে সন্ধ্যাকালীন বাংলার প্রকৃতি।

অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে, জামে ঝরে অবিরত’ – অজস্র চুমা বলতে কি বোঝানো হয়েছে?

উঃ কল্পনাপ্রবণ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশের সাতটি তারা’ কবিতাটিতে পল্লীবাংলার সন্ধ্যা এক মানসী রূপে আবির্ভূত হয়েছে। সূর্যাস্তের পর সেই মানসী তার কালো চুল ছড়িয়ে দেয় বাংলার আকাশে। আকাশে ছড়িয়ে পড়া তার কালো চুল ধীরে ধীরে অন্ধকারের স্পর্শ নিয়ে আসে প্রকৃতির বুকে। হিজল, কাঁঠাল ও জাম গাছের পাতায় নেমে আসে সেই অন্ধকার যেন সেই রূপসীর চুলের চুম্বন।

.’এরই মাঝে বাংলার প্রাণ; —পঙক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

উঃ উধৃত পঙক্তিটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জীবনানন্দের কাছে শুধু এক ভূখণ্ড নয়, প্রাণময়ী মূর্তি। শব্দ-গন্ধ- বর্ণ-স্পর্শ দিয়ে কবি তাকে অনুভব করেন। আলোচ্য কবিতাটিতে তিনি বাংলার সন্ধ্যাকালীন প্রকৃতির এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। হিজল, কাঠাল, বট প্রভৃতি বৃক্ষ, ধান গাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, পুকুর, মাছ, কিশোর- কিশোরী অর্থাৎ মানুষ—এই সব নিয়েই বাংলার পরিপূর্ণ প্রকৃতি৷ এই প্রকৃতির মধ্যেই কবি বাংলার জীবন্ত সত্তাকে উপলব্ধি করেছেন ।

.“লাল লাল বর্টের ফলের/ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা”—তাৎপর্যব্যাখ্যা কর।

উঃ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি পল্লিপ্রকৃতির মধ্যে বাংলার প্রাণ’-কে খুঁজে পেয়েছিলেন। গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে এক নীরব ক্লান্তি | বাংলার শান্ত নিস্তরঙ্গ প্রকৃতির মধ্যে থাকা বিষাদময়তাকেই যেন কবি এখানে প্রত্যক্ষ করেন৷ গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা।

রচনাধর্মী প্রশ্ন

১ আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উঃ বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বিখ্যাত কবি হলেন জীবনানন্দ দাশ। সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যে নামকরণ বিষয় কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। আলোচ্য কবিতায় আকাশে সাতটি তারা  কবির চোখে ধরা পড়েছে। কবি সেই দৃশ্য দেখার জন্য মাটিতে ঘাসের উপর বসে পড়েছেন। রাঙা মেঘকে কবি মৃত মুনিয়ার মতো দেখেছেন । যা গঙ্গা সাগরে ডুবে গেছে, কেশবতী কন্যার ছায়া কবি সন্ধ্যার আকাশে লক্ষ করেছেন। তার নরম হাতের স্পর্শ কবি দেখেছেন চাল ধোয়া জল এর ঠান্ডাময় অবস্থার মধ্যে। বাংলার সন্ধ্যা প্রকৃতির মাঝে ও সন্ধ্যার আকাশের সাতটি তারার মাঝে কবি  প্রাণ খুঁজে পেয়েছেন। আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠেছে। পাঠকের মনের পর্দাতেও যেন সাতটি তারার ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই নাম করন টি যথার্থ এবং সার্থক হয়েছে।

আমি পাই টেৱ’–‘আমিকে? বক্তার অনুভবটি বিশ্লেষণ কর। 

উঃ ‘আমি’ হলেন ‘রূপসী বাংলা’-র স্রষ্টা ও বাংলার প্রকৃতিপ্রেমিক কবি জীবনানন্দ দাশ।কবি জীবনানন্দ গ্রামবাংলার প্রকৃতি জগতে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার অপরূপ দৃশ্য দেখে মোহিত। সন্ধ্যা আসছে শান্ত অনুগত কেশবতী কন্যার মতো। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার অন্ধকার কেশবতী কন্যার এলো চুলের মতো  দৃশ্যমান সবকিছু ঢেকে ফেলছে। তার চুলের স্পর্শ চুমার মত অবিরত ঝরছে গাছ-গাছালির ওপর। তার চুলের বিন্যাস থেকে স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে পড়ছে। সে গন্ধ নরম ধানে ও কলমি লতার ঘ্রাণে। হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল আর চাঁদা-সরপুঁটির মৃদু গন্ধে। সে ঘ্রাণ কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাতে ও কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাসে, বটের লাল লাল ফলের ব্যথিত গন্ধে। সান্ধ্য শোভার দৃশ্যে, ঘনায়মান অন্ধকারের স্পর্শ ও গন্ধের মাঝে নিহিত বাংলার সজীব প্রাণের অস্তিত্ব কবি অনুভব করেছেন। তিনি টের পেয়েছেন বাংলার প্রকৃতি জগতের রূপ, রস ও গন্ধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকা বাংলার মানুষের সজীবতা। এটাই বাঙালি প্রাণের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য।

আকাশে সাতটি তারাকবিতায় প্রকাশিত কবি জীবনানন্দের বঙ্গপ্রকৃতিপ্রীতির পরিচয় দাও।

উঃ কবি জীবনানন্দ দাশের বঙ্গপ্রকৃতি-প্রীতির শ্রেষ্ঠ পরিচয় হল রূপময়ী বাংলার প্রকৃতি জগতের অপার সৌন্দর্য নিয়ে লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘রূপসী বাংলা’। এই বইয়ের প্রতিটি কবিতার মধ্যে বঙ্গপ্রকৃতির নানা শোভা, নানা বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য যেন হাজার ছবি হয়ে ফুটে আছে। আকাশে সাতটি তারা কবিতা সেগুলির মধ্যে একটি। বাংলার বুকে নেমে আসা সন্ধ্যার দৃশ্য কবি কেবল দু-চোখ ভরে দেখেননি। তাঁর দৃষ্টিতে ঘনায়মান সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা। সে রূপসীর এলো চুল কেবল কবির চোখ ও মুখের ওপর ভাসমান নয়, তার চুলের চুমা অবিরত ঝরে হিজলে, কাঁঠালে, জামে।সন্ধ্যার এই দৃশ্য বাংলা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না বলে কবি মনে করেন। পৃথিবীর কোন পথ এ কন্যারে দেখে নি কো—’। হিজল কাঁঠাল জাম নিয়ে বাংলা প্রকৃতির যে গাছ-গাছালি তা বাংলার নিজস্ব প্রকৃতি জগৎ। ওই বঙ্গপ্রকৃতির আরও নিজস্ব অনুষঙ্গ হল নরম ধান, কলমি লতা, হাঁস, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটি, বটের লাল লাল ফল। ওইসব অনুষঙ্গের নিজস্ব ঘ্রাণ যেন রূপসী বঙ্গসন্ধ্যা কেশবতী কন্যার  চুলের বিন্যাস থেকে ঝরে পড়া স্নিগ্ধ গন্ধ।কবি জীবনানন্দ তাঁর গভীর ভালোবাসা ও মমত্ব দিয়ে বাংলার সমাগত সন্ধ্যার সৌন্দর্য বর্ণনার অবকাশে তাঁর বঙ্গপ্রকৃতির পরিচয়কে সার্থক করে রেখেছেন।

এৱই মাঝে বাংলার প্রাণ ;-কাৱ লেখা কোন্ কবিতা থেকে গৃহীত? প্রসঙ্গ নির্দেশ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

উত্তর:  আলোচ্য উদ্ধৃতিটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে গৃহীত।

 প্রসঙ্গ : প্রকৃতিভক্ত কবি জীবনানন্দ দাশ ঘাসের ওপর বসে বাংলার ঘনায়মান সন্ধ্যার শোভা দেখছেন। আকাশে এক-এক করে সাতটি তারা ফুটে উঠছে। সন্ধ্যা এসেছে ঘনায়মান অন্ধকার নিয়ে। সন্ধ্যার পরিব্যাপ্ত অন্ধকারকে কবি কেশবতী কন্যারূপে কল্পনা করেছেন। তাতে নির্জীব প্রকৃতি সচেতন ও সপ্রাণ মানবীরূপে কল্পিত হয়েছে। সন্ধ্যার অজস্র চুলের স্পর্শ ও ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার প্রকৃতিতে। ওই আলোচনা প্রসঙ্গে কবি এসে গেছেন বাংলার প্রকৃতি জগতের নিজস্ব ঘ্রাণের কথায় এবং বাংলার প্রাণের সজীবতার কথায়।

তাৎপর্য : বঙ্গপ্রকৃতির প্রতিটি জিনিসের নিজ নিজ ঘ্রাণ আছে। মাঠের নরম ধান, কলমিলতা, হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটি মাছ, কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত, শীতের নরম কামড়, কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাস, বটের লাল লাল ফল—প্রত্যেক বস্তুর আছে নিজ নিজ গন্ধের বৈশিষ্ট্য। কোনোটির ঘ্রাণ কোমল, কোনোটির মৃদু, কোনোটির তীব্র, কোনোটির আবার কেমন যেন ব্যথিত। বাংলার প্রকৃতি জগতের এই যে বৈচিত্র্য, এরই মাঝে আছে বাংলার প্রাণের অস্তিত্ব তার সজীবতা। এইসব কিছু নিয়েই বাংলার প্রাণময় অস্তিত্বের জগৎ। 

Click Here  To Download  The Pdf

RELATED POSTS

6 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Recent Posts

error: Content is protected !!