কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
১ নম্বরের প্রশ্ন–উত্তর
ক) ঈশান বলতে কোন দিক বোঝায়?
উঃ উত্তর-পুর্ব দিককে বোঝায়।
খ)’ কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উঃ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা চন্ডীমঙ্গল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
গ) চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যাওয়ার কারন কি?
উঃ আকাশ মেঘে ঢেকে যাওয়ার কারনে চারিদিকে অন্ধকার হয়েছে।
ঘ) হরিত শব্দটির অর্থ কি?
উঃ সবুজ
ঙ) মহি শব্দের প্রতিশব্দ লেখ।
উঃ ধরা, পৃথিবী
চ) সোঙরে শব্দের অর্থ কি?
উঃ স্মরণ করা
ছ) কলিঙ্গ দেশের লোক কাকে স্মরন করে?
উঃ কলিঙ্গ দেশের লোক জৈমিনি মুনিকে স্মরণ করে।
জ) কলিঙ্গবাসীর জৈমিনিকে স্মরন করার কারন কি?
উঃ জৈমিনি মুনি বজ্রপাত নিবারণ করতে পারেন তাই বজ্রাঘাতের থেকে রক্ষা পেতে তারা তাকে স্মরণ করেছে।
ঝ) ‘বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়’- রড় শব্দের অর্থ কি?
উঃ রড় শব্দের অর্থ হল দৌড়ানো
ঞ) চণ্ডীর আদেশ কে পেয়েছিলেন?
উঃ বীর হনুমান চণ্ডীর আদেশ পেয়েছিলেন।
ট) চণ্ডী হনুমানকে কি আদেশ দিয়েছিলেন?
উঃ চণ্ডী হনুমানকে মঠ- অট্টালিকা ভাঙ্গার আদেশ দিয়েছিলেন।
ঠ) আছুক শব্দের অর্থ কি?
উঃ আছুক শব্দের অর্থ থাকুক।
ড) কবিতায় শিল পরাকে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উঃকবিতায় শিল পরাকে ভাদ্র মাসের তাল পড়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
ঢ) কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কোন সময়ের মানুষ?
উঃ ষোড়শ শতাব্দীর।
ত) কারা ধুলায় আচ্ছাদিত হয়েছিল?
উঃ সবুজ মাঠের প্রান্তর গাছপালা।
থ) জৈমিনি কে?
উঃ জৈমিনি একজন বাকসিদ্ধ ঋষি, কথিত আছে যে এনার নাম স্মরণ করলে বজ্রপাত বন্ধ হয়।
৩ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর।
(ক)‘দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার।
– কেন এমন পরিস্থিতি হয়েছিল?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্কতিটি কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশে আমরা দেখি যে দেবী চন্ডীর আদেশে কলিঙ্গ দেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে।চারিদিকের আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হওয়ায় সমগ্র কলিঙ্গদেশ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে, ফলে কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না।
(খ)‘বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।।
– প্রজারা কোন বিপাকে পড়েছিল ?
উত্তর: মা চন্ডীর আদেশে কলিংদেশে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। প্রবল বজ্রপাত ও মুষল্ধারে বৃষ্টি পরতেই থাকে,নদীতে বান ডাকে এবং এই দুর্যোগের ফলে ঘর বাড়ি দুড়মুড় শব্দে ভেঙ্গে পড়তে থাকে। এখানে এই বিপাকের কথাই বলা হয়েছে।
(গ)‘চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ।
– ‘চারি মেঘ’ বলতে কী বোঝ? ‘অষ্ট গজরাজ’-এর পৌরাণিক অনুষঙ্গটি কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃত উক্তিটি কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। পুরাণ মতে ‘চারি মেঘ’হল সংবর্ত, আবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ।
পৌরাণিক মতে উক্ত চার রকম মেঘের বাহন হল অষ্ট গজরাজ তথা ঐরাবত, পুণ্ডরীক, বামন, কুমুদ, অজ্ঞান, পুষ্পদন্ত, সার্বভৌম ও সুপ্রতীক। এরা দিকগজ নামে পরিচিত। কবিতা অনুসারে বলা যায় ঐ আটটি হাতি চাররকম মেঘের সাহায্যে কলিঙ্গদেশে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে সমগ্র কলিঙ্গদেশ জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
(ঘ)‘ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল’ – কোন্ প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির অবতারণা করা হয়েছে?
উত্তর: কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত কলিঙ্গদেশে ‘ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশে কলিঙ্গদেশে ভয়াবহ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সঙ্গে শিলা বৃষ্টিও শুরু হয়। অত্যন্ত বড় আকৃতির শিলাগুলি প্রজাদের ঘরবাড়ির উপর আছড়ে পড়ে তাদের চাল ভেদ করে মেঝেতে এসে পড়তে থাকে ঠিক যেভাবে ভাদ্র মাসের পাকা তাল ভূপতিত হয়। ঘরবাড়ি , অট্টালিকা ধ্বংসকারী বিশাল শিলাগুলির আকৃতি বোঝাতে কবি উদ্ধৃতিটির অবতারণা করেছেন।
(ঙ)‘চণ্ডীর আদেশ পান বীর হনুমান। – চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান কী করেছিল?
উত্তর: দেবী চণ্ডী বীর হনুমানকে কলিঙ্গদেশকে বিধ্বস্ত করার আদেশ দিয়েছিলেন। দেবী চণ্ডীর আদেশে নেমে আসা ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগে কলিঙ্গ যখন বিপর্যস্ত তখন বীর হনুমান তার ধ্বংসলীলা শুরু করেন। কলিঙ্গ দেশের মথ, অট্টালিকা তিনি ভেঙ্গে চুরমার করে দেন, তার আঘাতে সব বাড়ি ঘর ধূলায় মিশিয়ে যায়।
(চ)“অম্বিকামঙ্গল গান শ্রী কবি কঙ্কণ “ – ‘অম্বিকামঙ্গল’ ও ‘শ্রী কবি কঙ্কণের পরিচয় দাও।
উঃ উদ্ধৃতাংশে ‘অম্বিকামঙ্গল’ বলতে কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘ চন্ডীমঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের কথাই বলা হয়েছে। কবির অপর নাম হল কবি কঙ্কণ। আসলে শিশুকাল থেকেই কবি মুকুন্দরাম লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবতাদের নিত্য সেবা করতেন এবং নিজের রচনা করা পদ্য গান হিসাবে গাইতেন। তাই এখানে কবি বলেছেন তিনি অম্বিকামঙ্গলের গান গাইছেন।
(ছ)ধুলায় আচ্ছাদিত হল যে ছিল হরিত/ উলটিয়া পড়ে শস্য প্রজা চমকিত– উদ্ধৃতাংশটির অর্থ লেখ
উঃ উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ।
গাছপালার সাধারণ রং হল সবুজ। কিন্তু মা চন্ডীর আদেশে কলিঙ্গ দেশে যে প্রবল ঝড় উঠেছিল তার ফলে সবুজ রঙের সকল উদ্ভিত ধূলোতে ঢাকা পড়েছে। শুধু তাই নয়,মাঠে যত শষ্য সঞ্চিত ছিল সেগুলি ঝড়ের প্রভাবে উল্টে পরেছে।ঝড়ের এই বিধ্বংসী রূপ দেখেই কলিংবাসী চমকে উঠেছে।
(জ)“সঘনে চিকুর পাড়ে বেঙ তড়কা বাজ”- বাক্যটির অর্থ লেখ।
উঃ উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ।
আমরা জানি ব্যাঙ লাফিয়ে লাফিয়ে একস্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে।কবি এখানে ঘন ঘন বাজ পড়াকে ব্যাঙ্গের লাফের সঙ্গে তুলনা করেছেন।কবি বলতে চেয়েছেন ব্যাঙ যেভাবে লাফায় তেমন ভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে মেঘ থেকে ঘন ঘন বাজ পড়ছে। আর চমকে ওঠা বিদ্যুৎ যেন কালো চুলের মাঝে ফুটে ওঠা সিঁথি।
(ঝ)“করিকর সমান বরিষে জলধারা/ জল মাহি একাকার পথ হইল হারা”- বাক্যটির তাতপর্য্য বিশ্লেষণ কর।
উঃ উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ।
করি অর্থাৎ হাতি এবং করিকর কথাটির অর্থ হাতির শূড়। হাতি যেভাবে তার শুঁড়ের সাহায্যে জল বর্ষন করে তেমন ভাবে আকাশ থেকে বিশাল ধারায় বর্ষন হয়ে চলেছে।
মহী কথার অর্থ পৃথিবী। অর্থাৎ প্রচন্ড বৃষ্টির দাপটে সারা পৃথিবী যেন জলে দুবে গেছে।তাই আলাদা করে আর কোনো পথের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বড় প্রশ্ন( প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫)
ক)বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়’- কোথাকার প্রজার কথা বলা হয়েছে? বিপাকের স্বরূপ বিশ্লেষণ কর।
উঃ উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ। এখানে কলিঙ্গ দেশের প্রজাদের কথা বলা হয়েছে।
মা চণ্ডীর আদেশে দেবতা ইন্দ্র আকাশে ঘন কালো মেঘের সৃষ্টি করেন এবং প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি সহ বজ্রপাত ঘটান। জলে কলিঙ্গ প্লাবিত হয়ে পথঘাট কিছুই বোঝা যায় না।দিন রাতের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘন অন্ধকারের মাঝে প্রজারা কেউ কারো অঙ্গ দেখতে পায় না, প্রবল বজ্রপাতে কেউ কারোর কথা শুনতে পায় না। চাষের খেতের ফসল সব পচন ধরে।পর্বত সমান উঁচু ঢেউগুলি সব ঘরবাড়ি অট্টালিকা দুমড়ে মুছড়ে ফেলে দেয়। এই বিপাকের ফলে প্রজারা তাদের ঘরবাড়ি ফেলে পলায়ন করেছে।
খ) ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি কীভাবে ধরা পড়েছে?
উঃকবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের অন্তর্গত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশে দেখা মা যায় চন্ডীর আদেশে কলিঙ্গে প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে। কলিঙ্গের আকাশে ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায়। ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। ঘন ঘন মেঘের গর্জনের সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টিপাত। প্রজারা ঘর ছেড়ে দ্রুত পালাতে থাকে। ঝড়ের দাপটে শস্যখেত এবং সবুজ গাছপালা নষ্ট হয়ে যায়। প্রবল বর্ষণে পথঘাট জলে দুবে যায়। আটটি দিকহস্তি যেন তাদের শুঁড়ে করে জলরাশির বান ঢালছে। বিপদ থেকে রক্ষা পেতে ভীত প্রজারা ঋষি জৈমিনি কে স্মরণ করতে থাকে। সাতদিন অবিরাম বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয় কৃষিক্ষেত্র, ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট। সাপেরা আশ্রয়হীন হয়ে ভাসতে থাকে। ভাদ্র মাসের তালের মতো বড়ো আকারের শিল ঘরের চাল ভেদ করে পড়তে থাকে। দেবীর আদেশে বীর হনুমান তাণ্ডব চালিয়ে মঠ, অট্টালিকা ধ্বংস করে প্রজাদের আরো বিপদগ্রস্ত করে তোলেন। দেবী চণ্ডীর আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায় ভীত প্রজারা অবশেষে কলিঙ্গ ত্যাগ করে চলে যায়।
Click Here To Download The Pdf