Home Uncategorized নব নব সৃষ্টি| নবম শ্রেণী| প্রশ্ন-উত্তর সমাধান । Naba Naba Sristi| Class...

নব নব সৃষ্টি| নবম শ্রেণী| প্রশ্ন-উত্তর সমাধান । Naba Naba Sristi| Class 9| Question- Answer Solved|

0
2580

নব নব সৃষ্টি

সৈয়দ মুজতফা আলি

ক)১ নম্বরের প্রশ্নঃ

. ‘নব নব সৃষ্টিরচনাংশে কোন্ কোন্ ভাষাকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেনআত্মনির্ভরশীল?

উত্তর: ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক প্রাচীন যুগের হিব্রু,গ্রিক, আবেস্তা,সংস্কৃত এবং আরবি ভাষাকে ‘আত্মনির্ভরশীল’ বলেছেন।

. “প্রাচীন যুগের সব ভাষাই তাই |”—প্রাচীন যুগের কোন্ কোন্ ভাষার কথা লেখক উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: লেখক প্রাচীন যুগের সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং কিছুটা পরবর্তীযুগের আরবি ভাষার কথা বলেছেন।

. লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বর্তমান যুগের কোন্ কোন্ ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়?

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বর্তমান যুগের ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়।

পাঠানমোগল যুগে আরবি ফারসি থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়েছিল কেন?

উত্তর: পাঠান-মোগল যুগে আইন-আদালত, খাজনাখারিজ নতুন করে দেখা দেওয়ায় আরবি-ফারসি ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়।

সে সম্বন্ধেও কারও কোনো সন্দেহ নেই।‘—কোন্ বিষয়ে সন্দেহ নেই?

উত্তর: শিক্ষার মাধ্যমরূপে ইংরেজির বদলে বাংলা গ্রহণ করলে প্রচুর পরিমাণে ইউরোপীয় শব্দ বাংলায় প্রবেশ করবে এ বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।

. ‘নব নব সৃষ্টিরচনাংশে লেখক রান্নাঘর থেকে কী কী তাড়ানো মুশকিল বলেছেন?

উত্তর: ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখকের মতে রান্নাঘর থেকে আলুকপি এ জাতীয় বিদেশি সবজি তাড়ানো মুশকিল।

.“হিন্দি উপস্থিত সেই চেষ্টাটা করছে‘—হিন্দি কোন্ চেষ্টা করছে?

উত্তর: হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথা এখানে বলা হয়েছে |

নব নব সৃষ্টিরচলাংশে ব্যবহৃতআলালহুতোমবলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: আলাল’ হল আলালের ঘরের দুলাল, লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র। ‘হুতোম হল হুতোম প্যাঁচার নকশা, লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ।

৯ হিন্দি ভাষাসাহিত্যের বঙ্কিম কাকে বলা হয়?

উত্তর: হিন্দি ভাষাসাহিত্যের বঙ্কিম বলা হয় বিখ্যাত সাহিত্যিক মুন্সী প্রেমচাদকে।

১০এস্থলে আর একটি কথা বলে রাখা ভালো।”—কী কথা বলেছেন লেখক?

উত্তর: বলার ভাষা তার বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে, এ কথা বলেছেন লেখক।

১১ লেখকের মতে শংকরদর্শন আলোচনায় কোন্ ভাষার ব্যবহার স্বাভাবিক হবে?

উত্তর: শংকরদর্শন আলোচনায় সংস্কৃত ভাষার আধিক্য থাকাটাই স্বাভাবিক সৈয়দ মুজতবা আলী।

১২ কোন্ পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে বলেছেন?

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, বসুমতী পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে৷

১৩ লেখকের মতে বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ ঢুকেছে তার মধ্যে কোন্ কোন্ ভাষা প্রধান?

উত্তর: বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে তার মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি অন্যতম।

১৪. স্কুলকলেজ থেকে যে আমরা সংস্কৃতচর্চা উঠিয়ে দিতে চাই না তার অন্যতম প্রধান কারণ কী বলেছেন লেখক?

উত্তর: বাংলা অনেকাংশেই সংস্কৃত ভাষার ওপর নির্ভরশীল, তাই শিক্ষাক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার চর্চা বন্ধ করা হয়নি।

১৫. কোন্ বিশেষ বিশেষ বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশ্যই প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেন?

উত্তর: দর্শন, নন্দনশা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যার মত বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশই প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেন।

১৬. “এই দুই ভাষা থেকে ব্যাপকভাবে আর নূতন শব্দ বাংলাতে ঢুকবে।”—কোন্ দুই ভাষা কথা এখানে বলা হয়েছে?

উত্তর: ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে সৈয়দ মুজতবা আলী দুই ভাষা বলতে আরবি এবং ফারসি ভাষার কথা বলেছেন।

১৭. হিন্দি গদ্যের ওপর কোন্ ভাষার প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন লেখক?

উত্তর: হিন্দি গদ্যের ওপর ফারসি ভাষার প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন লেখক |

১৮ ভারতীয় আর্যরা কোন্ ভাষার সৌন্দর্যে বেশি অভিভূত হয়েছিল?

উত্তর: ভারতীয় আর্যরা ফারসি ভাষার সৌন্দর্যে বেশি অভিভূত হয়েছিল।

১৯.উর্দু সাহিত্যের মূলসুর কোন ভাষার সঙ্গে বাঁধা বলেছেন লেখক?

উত্তর: উর্দু সাহিত্যের মূলসুর ফারসির সঙ্গে বাঁধা বলেছেন লেখক।

২০. ইরানে নবীন ফারসি ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল কীভাবে?

উত্তর: আর্য ইরানি ভাষা এবং সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষে ইরানে নবীন ফারসি ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল।

২১, ইরানে আর্যইরানি ভাষা সেমিতিআরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে কী হয়েছিল?

উত্তর: ইরানে ইরানি ভাষা ও সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি সাহিত্যের সৃষ্টি হয়।

২২. “ভারতবর্ষীয় তিন ভাষা ফার্সির মতো নব নব সৃষ্টি দিয়ে ঐশ্বর্যশালী সাহিত্যসৃষ্টি করতে পারল না।”—ভারতবর্ষের তিন ভাষা কী কী?

উত্তর: ভারতবর্ষীয় এ তিন ভাষা’ বলতে সিদ্ধি, উর্দু এবং কাশ্মীরি ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।

২৩. ‘নব নব সৃষ্টিরচনাংশে লেখক কোন্ উর্দু কবির কথা উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক উর্দু কবি ইকবালের কথা উল্লেখ করেছেন|

২৪ কে, উর্দুকে ফারসির অনুকরণ থেকে নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন?

উত্তর:উর্দু ভাষার কবি ইকবাল উর্দু ভাষাকে ফারসির অনুকরণ থেকে কিৎি নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

২৫, সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি কোনটি ?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন যে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি হল পদাবলি কীর্তন।

২৬, “ সাহিত্যের প্রাগ এবং দেহ উভয়ই খাটি বাঙালি।”—কোন্ সাহিত্যকে বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে পদাবলি কীর্তন সম্পর্কে আলোচ্য উধৃতাংশটি ব্যবহৃত হয়েছে।

২৭ কোন দেবতা বাংলায় খাটি কানু রূপ ধারণ করেছিলেন?

উত্তর : মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণ বাংলায় খাঁটি কানুরূপ ধারণ করেছিলেন।

২৮ প্রেমচন্দ্র কোন ভাষা বিস্তৱ ব্যবহার করেছেন?

উত্তর : প্রেমচন্দ্র হিন্দিতে আরবি-ফারসি ভাষা বিস্তর ব্যবহার করেছেন।

) নম্বরের প্রশ্ন উত্তরঃ

সংস্কৃত ভাষা আত্মনির্ভরশীল‘—কেন সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে কথাবলা হয়েছে?

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলেছেন কারন কোনো নতুন চিন্তা, অনুভূতির প্রকাশের জন্য নতুন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষা তা অন্য ভাষা থেকে ধার করার কথা কখনওই ভাবে না| পরিবর্তে নিজের শব্দভাণ্ডারে তার খোঁজ করে। নিজের ভাণ্ডারে থাকা ধাতু বা শব্দ খোজে যার সামান্য অদলবদল করে কিংবা পুরোনো ধাতু দিয়েই নতুন শব্দটি তৈরি করা যেতে পারে। এই কারণেই সংস্কৃতকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলা হয়েছে|

বর্তমান যুগের ইংৱেজি বাংলা আত্মনির্ভরশীল নয়।”—‘নব নব সৃষ্টিপ্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কীভাবে এই সিদ্ধান্তে  উপনীত   হয়েছেন?

উত্তর: প্রাচীন যুগের সংস্কৃত ভাষা তো বটেই, তা ছাড়া হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা প্রভৃতি সব ভাষাই ছিল আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়। কারণ, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ গৃহীত হয়েছে ও হচ্ছে। পাঠান-মোগল শাসন যুগে আইন-আদালত, খাজনাখারিজ ব্যাপারে নতুন নতুন শব্দের জন্য আরবি ও ফারসি ভাষা থেকে শব্দ নিতে হয়েছিল। তার পরবর্তী ইংরেজ শাসন যুগে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে নিতে হয়েছে কিংবা হচ্ছে অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ। ইংরেজির মাধ্যমে প্রচুর ইউরোপীয় শব্দ আমাদের বাংলা ভাষায় ঢুকেছে। কাজেই বর্তমান বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়।

.“বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর“—কেন লেখক কথা বলেছেন আলোচনা কর।

উত্তর: বাংলা ভাষা কখনোই আত্মনির্ভরশীল নয়। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ নিয়েছি এবং সেই প্রক্রিয়া এখনও বজায় রয়েছে। পাঠান ও মোগল যুগে আইন-আদালত ইত্যাদি প্রসঙ্গে প্রচুর আরবি ও ফারসি শব্দ গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী যুগে ইংরেজি ভাষা থেকেও এই শব্দ নেওয়া হয়েছে | তার পরিমাণ এতটাই বেশি যে, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ হয় না। লেখকের মতে, শিক্ষার মাধ্যমরুপে ইংরেজিকে বর্জন করে বাংলা গ্রহণ করার পরে এই প্রবণতা আরও বাড়বে। ফলে বিদেশি শব্দের আমদানি করার ভাবনা যখন বন্ধ করা যাবে না, সেক্ষেত্রে তার ভালোমন্দ নিয়ে ভাবা নিতান্তই অর্থহীন।

এস্থলে আর একটি কথা বলে রাখা ভালো” –বক্তা কোন স্থলে কী কথা বলে রাখা ভালো বলেছেন ?

উত্তর – বক্তা মুজতবা আলী তার নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধাংশে হিন্দি ভাষার অন্য ভাষাকে বর্জনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এমনকি হিন্দি সাহিত্যের প্রেমচন্দ্র যেভাবে নিজ নিজ সাহিত্যে অন্য ভাষার ব্যবহার করেছেন, সে প্রসঙ্গের রেশ টেনেছেন। তার মতে, রচনার ভাষা সর্বদা বিষয়বস্তুর উপর নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে তিনি ব বলেছেন, শংকর দর্শন, মোগলাই রেস্তোরাঁ, বসুমতীর সম্পাদকীয় ও বাঁকা চোখের ভাষা কখনোই একরকম হবে না।

তখনই সেটা গ্রহণ করতে চেয়েছে এখানেসেটাবলতে কী কথা বলা হয়েছে? যখনই সেটা গ্রহণ করতে চাওয়া হয়েছে তাৱ ফলই বা কী হয়েছে

 উত্তর : ‘সেটা বলতে এ কথা বলতে চাওয়া হয়েছে যে, ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি যখনই যার মধ্যে বাঙালি সত্য শিব ও সুন্দরের খোঁজ পেয়েছে তখনই সে তা গ্রহণ করেছে। গ্রহণ করতে চাওয়ার ফলে এই হয়েছে যে, গতানুগতিক পথা’, ‘প্রাচীন ঐতিহ্য’-এর দোহাই দিয়ে সে প্রচেষ্টায় বাধা দিতে গেলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছে। সে বিদ্রোহ উদ্ধৃঙ্খলতায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হলে তার বিরুদ্ধে আবার বিদ্রোহ হয়েছে।

ধর্ম বদলালেই জাতিৱ চরিত্র বদলায় না।’-কাৱ লেখা কোন্ ৱচনার অংশবিশেষ? উদ্ধৃতিৱ প্রসঙ্গ নির্দেশ কৱে। 

উত্তর : আলোচ্য উদ্ধৃতিটি প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলীর  লেখা প্রবন্ধ ‘নব নব সৃষ্টির অংশবিশেষ।বাঙালি হিন্দুর ভিতরেই বিদ্রোহ কেবল সীমাবদ্ধ নয়।বাঙালির মধ্যে মুসলমান ধর্মের লোকও আছে। তারা হিন্দু থেকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বাঙালি হিন্দুর মতো বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও একই বিদ্রোহের প্রবণতা বিদ্যমান। ধর্ম পরিবর্তনের ফলে চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি।

স্কুল থেকে সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে না দেবার কারণ প্রসঙ্গে বক্তা কী বলেছেন?

উত্তর – সংস্কৃত ভাষা অত্যন্ত উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। নতুন শব্দ তৈরির ব্যাপারে অসামান্য দক্ষতা আছে এই ভাষার। প্রাচীনকাল থেকে এদেশে সংস্কৃত চর্চা ছিল বলে বহু সংস্কৃত শব্দ বাংলায় ঢুকেছে, ঢুকছে এবং আগামীতে যতদিন এ ভাষা থাকবে ততদিন ঢুকবে। স্কুল-কলেজ থেকে সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে না দেবার কারণ বাংলায় এখনও আমাদের প্রচুর সংস্কৃত শব্দের প্রয়োজন। সংস্কৃত ই চর্চা উঠে যাওয়ার অর্থ বাংলা তার প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

পৃথিবীতে কোনো জিনিসই সম্পূর্ণ অসম্ভব নয়।বক্তা কোন প্রসঙ্গে এরূপ মন্তব্য করেছেন?

উত্তর – উদ্ধৃতাংশটি মুজতবা আলীর নব নব সৃষ্টি নামক রচনাংশ থেকে গৃহীত। যে-কোনো ভাষার শব্দভাণ্ডার অন্য ভাষা থেকে গ্রহণ করা আগন্তুক বা কৃত ঋণ শব্দ দ্বারা সমৃদ্ধ হয়। তাই হিন্দি সাহিত্য হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দকে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টাটা শুরু করেছে। লেখক হিন্দি সাহিত্যিকদের এই প্রচেষ্টাকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছেন এবং তাদের প্রতি অনুপ্রেরণাসূচক এই উক্তিটি করেছেন।

ভাটিয়ালিৱ নায়িকা, বাউলেৱ ভক্ত, মুৱশিদিয়াৱ আশিক পদাবলিৱ শ্রীরাধা একই চৱিত্ৰ’-ভাটিয়ালি, বাউল, মুরশিদিয়া শ্রীরাধার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

উত্তর;  ভাটিয়ালি : বাংলাদেশের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে নৌকার মাঝি-মাল্লাদের গান। উল্লেখযোগ্য লোকসংগীত।

বাউল : বাউল সম্প্রদায়ের রচিত গান।

মুর্শিদি : মুর্শিদি হল গুরুবাদী মুসলমান সম্প্রদায়ের ভাব ও গান। 

শ্রীরাধা : রাধা হলেন কৃষপ্রেমিকা ও গোপবালা। পিতা বৃষভানু, মাতা কলাবতী ও স্বামী আয়ন ঘোষ। তিনি ঈশ্বর জ্ঞানে কৃষ্ণকে মনপ্রাণ সমর্পণ করেন।

১০সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দিলে আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হব।লেখক কথা বলেছেন কেন?

উত্তর : নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন আমরা যে ভাষার চর্চা বেশি করি তার শব্দ আমাদের বাংলাতে ঢোকে বেশি। সংস্কৃত বেশি চর্চার ফলে বাংলায় বিস্তর সংস্কৃত এককালে ঢুকেছে। স্কুল-কলেজের পাঠ্য বিষয় থেকে সংস্কৃত তুলে না দেওয়াই শ্রেয়। কারণ বাংলা ভাষাতে এখনও সংস্কৃত শব্দের প্রয়োজনীয়তা আছে। লেখক সেজন্য বলেছেন যে, সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দেওয়ার অর্থ হল বাঙালির অন্যতম খাদ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া।

১১ আলাল’, ‘হূতোমশংকৱদর্শন’-এর পরিচয় দাও। 

উত্তর : ‘আলাল’ শব্দটি ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। প্যারীচাঁদ মিত্রের ছদ্মনাম হল ‘টেকচাদ ঠাকুর। তিনি ছদ্মনামে চলিত বাংলায় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসটি লেখেন।

কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গদ্যরচনার সংক্ষিপ্ত নাম ‘হুতোম। কলকাতার কথ্য বাংলায় লেখা সেই আমলের কলকাতার বাবু চরিত্রের বর্ণনা নিয়ে লেখা  ১৮৬১-৬২ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়।

শংকরাচার্য বিশ্বের সেরা দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। লেখক তাঁর দর্শনকে বলেছেন শংকরদর্শন। অদ্বৈতবাদ নিয়ে তাঁর দর্শন।

গ) বড় প্রশ্ন উত্তর

১।বিদেশি শব্দ ব্যবহার বিষয়ে লেখক মুজতবা আলীর ভাবনার পরিচয় দাও।
অথবা, বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর।‘—কে এমন মনে করেন? তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী লেখো।

উত্তর – লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি রচনাংশে বর্তমানে বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে বিষয়ে প্রশ্ন অবান্তর বলে মনে করেন।

লেখকের মতে, দৈনন্দিন জীবনে আলু-কপি কিংবা বিলিতি ওষুধের মতই আমাদের ভাষাতেও বিদেশি শব্দ থেকে যাবে এবং ভবিষ্যতে তা আমদানি করাও বন্ধ করা যাবে না। প্রাচীন কাল থেকেই বাংলা ভাষায় সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি শব্দ অনায়াসে মিশেছে। ইংরেজি ভাষার বদলে বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালু করার ফল হাতেনাতে পাওয়া গেছে। কেউ কেউ জোর করে বিদেশি শব্দ বর্জনের চেষ্টা করলেও মুজতবা আলী জানিয়েছেন, বিখ্যাত লেখকেরা অনেকেই সাদরে বিদেশি শব্দ গ্রহণ করেছেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন আবু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে’… ইত্যাদি। এখানে ‘আব্রু, ইজজৎ’, ইমান’ আরবি শব্দ। আবার নজরুল ইসলামই বাংলায় আরবি শব্দ ইনকিলাব ঢুকিয়ে গিয়েছেন। বিদ্যাসাগর সাধু গদ্যে বিদেশি শব্দ ব্যবহার না করলেও, অসাধু রচনায় আরবি, ফারসি প্রচুর ব্যবহার করেছেন। নিষ্ঠাবান পণ্ডিত হলেও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বিদেশি শব্দ বিশেষত আরবি-ফারসির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করাকে বোকামি মনে করতেন। এমনকি হিন্দি সাহিত্যে প্রেমচন্দ্রও বিস্তর আরবি-ফারসি ভাষা ব্যবহার করেছেন। এইসব দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রাবন্ধিক বুঝিয়ে দিয়েছেন বিদেশি শব্দের ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে প্রশ্ন তোলাই অবান্তর।

২।বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তাৱ পদাবলি কীর্তনে।এই মন্তব্যেৱ স্বপক্ষে লেখকের বক্তব্য লেখো বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান’– লেখকের অনুসরণে আলোচনা করো। 

উত্তর : সৈয়দ মুজতবা আলী বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তার পদাবলি কীর্তনে। পদাবলি সাহিত্যের দেহ ও প্রাণ দুই-ই খাঁটি বাঙালি। পদাবলি সাহিত্যের কানু বা কানাই মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের খাঁটি বাঙালি রূপ। পুরাণ ও ভাগবতের শ্রীরাধা পদাবলি সাহিত্যে খাঁটি বাঙালি মেয়ে। ভাটিয়ালির নায়িকা, বাউলের ভক্ত, মুরশিদিয়ার আশিক আর পদাবলির শ্রীরাধা একই চরিত্র।

 প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান। সে রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য যাতেই যখনই সত্য-শিব-সুন্দরের খোঁজ পেয়েছে, তখনই সে সেটা গ্রহণ করতে চেয়েছে। কেউ তখন তাকে ‘গতানুগতিক পন্থা’ বা ‘প্রাচীন ঐতিহ্য’-এর দোহাই দিয়ে সে চেষ্টায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেই সে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। বিদ্রোহ উচ্ছঙ্খলতায় পরিণত হলে তার বিরুদ্ধে আবার বিদ্রোহ করেছে। এই বিদ্রোহের প্রবণতা কিন্তু হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব বাঙালির মধ্যেই বিদ্যমান। ধর্ম পালটালেও জাতিগত চরিত্র থেকেছে অপরিবর্তিত।

৩।ধর্ম বদলালেই জাতিৱ চরিত্র বদলায় না।’-উৎস প্রসঙ্গ নির্দেশ কর। উদ্ধৃতিৱ তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: আলোচ্য উদ্ধৃতিটি প্রখ্যাত প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের শেষে সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি ও বাঙালি চরিত্রের বিদ্রোহ সম্পর্কে আ্লোচনা করেছেন। বৈষব পদাবলি কীর্তনে খাঁটি বাঙালিয়ানার পরিচয় ফুটে উঠেছে। মহাভারতে শ্রীকৃয়, পুরাণ ও ভাগবতের শ্রীরাধা যথাক্রমে বাঙালি পুরুষ ও বাঙালি নারী হয়ে উঠেছেন বৈষ্ণব পদকর্তাদের কলমে। আবার আরবী ও ফারসী ভাষার নানা শব্দও বাঙ্গালী  নিঃসন্দেহে গ্রহণ করেছে।বাঙালি চরিত্রে বিদ্রোহের পরিচয় মিলেছে রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্যের ক্ষেত্রে যেখানে সত্যশিব-সুন্দরের সন্ধান পেয়ে তা গ্রহণের বিরুদ্ধে বাধা এসেছে, সেখানে সেই বাধার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রকাশ দেখা গেছে।এই বৈশিষ্ট্য কেবল হিন্দুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যারা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যেও সমানভাবে বিদ্যমান। এটিও বাঙালি জাতীয় চরিত্রের আর-একটি বৈশিষ্ট্য। তা হল ধর্ম যেন বাইরের আবরণ। আচ্ছাদনের পরিবর্তন দেহগত কাঠামোকে যেমন পালটায় না, তেমনি ধর্মও জাতিগত চরিত্রকে পালটাতে পারেনি বলেই বাঙালি চরিত্রের বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যটি হিন্দু-মুসলমান এই ধর্মগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও অটুট থেকেছে। 

৪।ফল যদি ভাল হয় তখন তারা না হয় চেষ্টা করে দেখবেন।কী চেষ্টা করে দেখার কথা এখানে বলা হয়েছে? এবিষয়ে বাঙালি সাহিত্যিকদের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর – সমালোচকদের মতে, একটা ভাষা তখনই। আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে যখন নতুন শব্দের প্রয়োজনে বিদেশি। শব্দের মুখাপেক্ষী না থেকে নিজস্ব শব্দভাণ্ডার থেকেই শব্দ খুঁজে এনে প্রয়োগ করে। হিন্দি উপস্থিত সেই চেষ্টাটা শুরু করেছে। হিন্দি সাহিত্যিকেরা হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ বর্জন করতে শুরু করেছে। এখানে এই প্রচেষ্টার কথাই বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাঙালি সাহিত্যিকদের ধারণা ছিল বেশ স্পষ্ট। বাংলায় সংস্কৃত অন্যান্য প্রাচীন ভাষার মতো বা শব্দ সৃষ্টির ক্ষমতা ছিল না। তাই নতুন শব্দ বা বিষয়-ভাবনার অভিনব চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ করতে বিদেশি ভাষার প্রয়োজন। ইংরেজিকে শিক্ষার মাধ্যমরূপে বর্জন করার ফলে বাংলায় প্রচুর ইউরোপীয় শব্দ প্রবেশ করেছে। রচনার সঙ্গে পারম্পর্য রক্ষা করলে বিদেশি ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা নেই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগরের মত ব্যক্তিত্বরা অনায়াসেই আরবি-ফারসির ব্যবহার বাংলায় । করে গেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তো এই দুই ভাষার বিরোধীদের আহাম্মুখ’ বলেছেন। ‘আলাল ও ‘হুতোম’-এর ভাষার যেমন ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা আছে ঠিক তেমনি শংকর দর্শন, বসুমতী’র সম্পাদকীয় ভাষা কিংবা ‘বাঁকা চোখের ভাষা ও ভিন্ন। ভিন্ন প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। এককথায় রচনার ভাষা। বিষয়ানানুগ হলে ভাষা সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যশালী হয়।

Click here To Download  The PDF

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!